উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা ঝর্ণা বেগম (৫৬)। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলছেন, ‘আমি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। সজীব সব সময় আমাকে ছোট্ট সন্তানের মতো আগলে রাখত। সকলের খরচ জোগাত সে। তার বাবার বয়স হয়েছে অবসরে যাওয়ারও সময় হয়ে এসেছে। এখন কে আমাকে সন্তানের মতো আগলে রাখবে।’ তার প্রশ্ন ‘কী দোষ ছিল আমার ডাক্তার ছেলের?
ঝর্ণা বেগম বলেন ‘পুলিশের’ গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন তার ছেলে ডা. সজীব সরকার (৩০)। পরিবারের দাবি, গত ১৮ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ মধ্যে ছোট ভাইকে আনতে গিয়ে ঢাকার আজমপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বড় ছেলে ডা. সজীব সরকার। নিহত সজীব নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মেঝেরকান্দি গ্রামের মো. হালিম সরকারের ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ডা. সজীব।
নিহত ডা. সজীব সরকারের মা ঝর্ণা বেগমের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সাংবাদিকের কথা শুনতেই সবকিছু জেরে ফেলে দিয়ে সামনে এসে বলেন, ‘গত ১৮ জুলাই আমার ছোট ছেলেকে আনতে বেলা ১১টায় বাসা থেকে বের হয় সজীব। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার দিকে আমাকে ফোন করে বলে-মা আমি আজমপুর পৌঁছে গেছি আর কয়েক মিনিটের মধ্যে আব্দুল্লাহর মাদ্রাসায় পৌঁছে যাব তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি আব্দুল্লাহকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ে চলে আসব। রাত ১টা পর্যন্ত ছেলের অপেক্ষায় বসে ছিলাম। ছেলে আমার ফিরে এসেছে ঠিক তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে।’
তিনি আবার বলতে শুরু করেন, ‘আমাদের যা ছিল সব ছেলেকে ডাক্তার বানাতে ব্যয় করেছি। সব হারিয়ে বলতে গেলে আমরা এখন নিঃস্ব। আপনারা কি বলতে পারেন আমার ছেলে হত্যার বিচার কীভাবে পাব? বলেই তিনি আবার মূর্ছা যান।’
ডা. সজীব সরকারের বোন সুমাইয়া সরকার বলেন, ‘গত ১৮ জুলাই দুপুরে ঢাকার উত্তরা থানার আজমপুর এলাকার আশরাফুল উলুম মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছোট ভাই আব্দুল্লাহকে আনতে নরসিংদীর বাসা থেকে বের হন। আজমপুর এলাকায় বাস থেকে নেমে সামনেই আন্দোলনকারী আর পুলিশের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার মধ্যে পড়েন। বিকাল তখন সাড়ে ৫টা থেকে ৬টা। বাস থেকে নেমে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে থাকেন। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন আমার বড় ভাই।’
নিহতের বাবা মো. হালিম সরকার বলেন, ‘ওরা কেন আমার ছেলেটাকে কেড়ে নিল? আমার ছেলে তো কারো ক্ষতি করেনি।’