কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতায় ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিশেষ করে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। কারফিউয়ের কারণে চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছাতে পারেন নি।
ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোক্তারা বলছেন, গত সাত দিনে তাঁদের পাঁচ-সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাঁদের মূলধন থেকে অর্থ ব্যয় করতে হবে। ব্যবসা বন্ধ থাকলেও কর্মীদের বেতন দিতে হবে। এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।খুবই স্বল্প পরিসরে নিত্য পণ্য সরবরাহ করা হয়। যারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করেন তাঁদের ব্যবসায় ক্ষতি হয়।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৩৫টিরও বেশি ঐতিহ্যবাহী পণ্য তৈরি করে ‘সতেজ ফুড’, যা দেশের বিভিন্ন সুপার শপে সরবরাহ করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৩৫ জন কর্মী।
ইন্টারনেট বন্ধের পর থেকে খাদ্য তৈরির কাজও থেমে ছিল। এতে একদিকে খাদ্য প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছিল না, অন্যদিকে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। সতেজ ফুডের প্রতিষ্ঠাতা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘টঙ্গীতে আমাদের কারখানা। সেখানে সংঘর্ষ হয়েছে। কারখানায় গ্যাস ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করা হয়।
কারখানা চালু রাখলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। অন্যদিকে পণ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিতরা বাইরে বের হয়ে অঘটনের শিকার হলে এর দায় আমাকেই নিতে হতো। এসব বিবেচনায় কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
শুধু এই প্রতিষ্ঠানই নয়, এ রকম প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে খাদ্যপণ্য ও শাক-সবজির সংকট দেখা দেয়।
মাছের হাটবাজার’ নামের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মাছ বিক্রি করেন জেরিন খান। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটে রয়েছে তাঁর ক্রেতা। গত ১৫ জুলাই থেকে তাঁর ব্যবসা সংক্রান্ত সব কাজ বন্ধ ছিলো। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরে মাছ সরবরাহ করতে পারিনি। মৌসুমি ফল ও পোশাকের বিক্রিও সব বন্ধ রাখতে হয়েছে। ইন্টারনেট না থাকায় গ্রাহকরা সরাসরি ফোন নম্বরে কল দিয়ে মাছ চেয়েছেন। কিন্তু মাছ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ ঘাট থেকে মাছ নিয়ে এসে সেগুলোকে বাসায় পৌঁছে দিতে হয়। কিন্তু কারফিউ ও আন্দোলনের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে তো ডেলিভারিম্যানদের বাইরে পাঠাতে পারিনি।
তিনি বলেন, ‘সাত দিনে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ফেসবুক পেজে পোস্ট দিতে না পারার জন্য রিচ কমে যাবে। রিচ আগের মতো আনতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। আবার কর্মীদের বেতন কিন্তু ঠিকই দিতে হবে। ফলে এরই মধ্যে এক মাস পিছিয়ে গেলাম।’
সারা দেশে কত সংখ্যক অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা রয়েছেন তার এখনকার তথ্য নেই। যা আছে তাও প্রায় ১১ বছর আগের ২০১৩ সালের বিবিএস এর তথ্য। সেই তথ্যানুযায়ী সারা দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের উদ্যোক্তা ৭৮ লাখ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত ১১ বছরে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি রয়েছে। চলমান আন্দোলন ও কারফিউয়ের কারণে এসব উদ্যোক্তাদের উৎপাদন ব্যহত হয়েছে।