রেমিট্যান্সে উল্টো গতির খবর শুনেই খোলাবাজারে বাড়তে শুরু করেছে ডলারের দাম। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স শাটডাউনের খবরে এক দিনের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। গতকাল মঙ্গলবার দাম বেড়ে ১২৪ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে ডলার। এর আগে একলাফে ডলারের দাম সাত টাকা বৃদ্ধির ফলে মে মাসের ৯ তারিখ খেলাবাজারে ১২৮ টাকায় উঠেছিল মার্কিন এই মুদ্রার দাম।
পরে তা কমে ১২০-১২১ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। নতুন করে ফের বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা এবং পল্টন এলাকার বিভিন্ন মানি চেঞ্জার হাউসে ডলারের দামের এ তথ্য পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাসের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গুজব ছড়ানোর ফলে দেশে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে। যে কারণে এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা।
এখন এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১২৪ থেকে ১২৪ টাকা ২০ পয়সা। গত রবিবার ও সোমবারও খোলাবাজারে ডলার ১২১ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মঙ্গলবার ক্রেতা ও বিক্রেতা পরিচয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব মানি চেঞ্জার হাউসগুলোতেই ডলার কেনা হচ্ছে ১২৩ থেকে ১২৩ টাকা ৫০ পয়সায়। আর বিক্রি করা হচ্ছে ১২৪ থেকে ১২৪ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত। মতিঝিলে ডলার কিনতে আসা জনৈক শরিফ বলেন, ‘হঠাৎ কয়েক দিনের জন্য দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে।
খরচের জন্য নগদ ডলার কিনতে মানি চেঞ্জারে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি ডলারের দাম বেশি। হঠাৎ ১২৪ টাকা চাচ্ছে। কিন্তু বেশি দামে ডলার কেনার প্রস্তুতি নেই আমার। তাই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনে আবার এই রেটেই কিনলাম। কারণ শুনলাম দাম আরো বেড়ে যাবে।’
বিক্রেতা পরিচয়ে রাজধানীর ফকিরাপুলের নিবেদিতা মানি এক্সচেঞ্জার লিমিটেডে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার প্রধান মাকছুদুর রহমান বলেন, ‘আজকে পর্যন্ত আমরা ২৩ টাকা করে কিনেছি। সব জায়গায় এই দামেই কেনা হচ্ছে।’ ক্রেতা পরিচয়ে দিলকুশার জামান মানি এক্সচেঞ্জার হাউসের জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনি কত ডলার কিনবেন তার ওপর দাম। আজকে ১২৪ টাকা দরে বিক্রি করতেছি। ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা আমাদেরই কেনা পড়তেছে। কালকের দর কী হবে বলা যাচ্ছে না।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে চলতি মাসের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে।
এ বিষয়ে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব গৌতম দে বলেন, ‘মার্কেটে ডলার কম থাকার কারণে দাম বেড়ে গেছে। আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে রেমিট্যান্স ঠিকমতো আসছে না। যার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। আজকে মার্কেট প্রাইস ১২৩-১২৪ চলতেছে। সামনে কী হবে বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে রিজার্ভের ওপর চাপ কমায় বেশি দামে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির একজন প্রভাবশালী ডেপুটি গভর্নর রোববার বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন ১২টির মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার রেট ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকা ৭০ পয়সা অফার করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ দেশে ইন্টারনেট ছিল না। ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম হয়নি। সারা বিশ্বের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন প্রায় বন্ধ ছিল। তাই রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য ডলারের রেট বাড়িয়ে দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, হঠাৎই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান। ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে গত ৯ মাসের ধারাবাহিক অর্জন জুলাইয়ে ব্যাহত হতে পারে। কারণ গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের আশপাশে বা তার চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। কিন্তু চলতি জুলাই মাসের ২৭ দিনে ১৫৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
খোলাবাজারের ডলার পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘খোলাবাজারের ডলারের দরের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। মার্কেটের দাম কখনো কম, কখনো বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। মার্কেট সারা জীবন এক রকম থাকবে এটা কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না। মার্কেট মার্কেটের মতোই চলবে।’