‘চেয়েছিলাম পোষ্টমর্টেম না করাতে, অতুটুকু শরীরে কি আর কাটাছেঁড়া করা যায়!’

বাংলাদেশ

কোটা আন্দোলনে সারাদেশ যখন বিক্ষোভে উত্তাল, কোটা আন্দোলনকারী-পুলিশ ও ছাত্রলীগের ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে ঠিক তখন বাবা মায়ের সঙ্গে বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সংঘর্ষের ঘটনা দেখতেছিল শিশু আহাদ। মা-বাবার সামনেই অজ্ঞাত একটি বুলেট এসে লাগে শিশু আহাদের মাথায়। মা সন্তানকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে দ্রুত কোলে তুলে নেন। ততক্ষণে শিশু আহাদের রক্তে মায়ের কোল ভিজে যায়। বাবা মা অবুঝ শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছালেও পরিস্থিতির কারণে সু-চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়। বাবা মা পরিবার পরিজনের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশু আহাদ।

ময়নাতদন্তের পরে লাশ নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদাহ গ্ৰামে আসে আহাদের পরিবার। পিতা নিজ হাতে কবরস্থানে সন্তানকে শায়িত করেন।

যাত্রাবাড়ির রায়েরবাগ এলাকায় একটি ১১তলা ভবনের ভাড়া বাসার ৮তলায় থাকতেন আহাদের পরিবার। আহাদের বাবা আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী আবুল হাসান ওরফে শান্ত। দুই ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও চার বছরের আব্দুল আহাদ এবং স্ত্রী সুমি আক্তার আবুল হাসানের পরিবার।

আবুল হাসান ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের মৃত বজলুর রহমানের ছেলে। তার পিতা বজলুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

পুকুরিয়া গ্রামের বাড়িতে গেলে ইত্তেফাককে আবুল হাসান জানান, ঘটনাটি গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকাল চারটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার। ভয়াবহ সংঘর্ষের সময় তাদের (বাবা-মায়ের) সঙ্গে বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখতেছিল আহাদ। হঠাৎ  গুলিবিদ্ধর পর আহাদ লুটিয়ে পড়লে তাকে নিয়ে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে দায়িত্বরত ডাক্তার আহাদকে আইসিইউ ওয়ার্ডে নিয়ে লাইফ সার্পোটে রাখে।

তিনি জানান, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের জানান- গুলি আহাদের মাথার মধ্যে আটকে আছে। জরুরি সিটি স্ক্যান করতে নেওয়া প্রয়োজন তবে আইসিইউর যন্ত্রপাতি খুলে ফেলা হলে আহাদের মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু একদিনের মাথায় শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই আহাদকে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার।

তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিনা ময়নাতদন্তে আহাদের লাশ নেওয়ার ইচ্ছে জানালে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি। বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সুপারিশ করেও কোন ফল হয়নি। পরে শিশুটিকে মর্গে নিয়ে রাখা হয় ওই রাতে।’

ময়না তদন্ত শেষ আহাদের লাশ তারা বুঝে পান রোববার বিকাল ৩টার দিকে।

আবুল হোসেন বলেন, ‘একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার শিকার হয়ে আমার ছেলে চলে গেল। এ নিয়ে আমি আর কি বলবো। তবে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। চেয়েছিলাম পোষ্টমর্টেম না করতে। অতুটুকু শরীর যাতে আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। কিন্তু আমাদের সে চেষ্টাও সফল হয়নি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *