ছুটির দিনেও সড়কে ব্যাপক উপস্থিতি ছিল মানুষের

বাংলাদেশ

চলমান পরিস্থিতিতে রাজধানীতে কারফিউ শিথিলের সময় পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে। এতে করে জনজীবনও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। অন্য স্বাভাবিক শুক্রবারের সঙ্গে গতকাল তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না।

বিপুলসংখ্যক মানুষ জুমার নামাজ আদায় করতে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে গেছে। তবে সড়কে যান চলাচল কিছুটা কম ছিল। মানুষের উপস্থিতিও ছিল কম। প্রয়োজন না থাকলে গতকাল জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত নগরবাসীকে তেমন বের হতে দেখা যায়নি।

যে সব এলাকায় বিপণিবিতান বেশি, দুপুরের পর থেকে সেসব এলাকায় লোকজনের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি ছিল। সড়কে গণপরিবহন এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল কম। রাজধানীর বেশির ভাগ প্রধান সড়কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক টহল বা অবস্থান দেখা যায়নি। তবে কারফিউ শিথিলের সময় গতকাল রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে দূরপাল্লার বাস চলাচল করেছে।

সকালে গাবতলী থেকে কিছু বাস উত্তরবঙ্গের দিকে, মহাখালী থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও সিলেট পথে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম ও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পথে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। অবশ্য যাত্রীর চাপ বেশি ছিল না।

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের পথে চলাচলকারী সৌখিন এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাসের চালক শফিক মিয়া বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে বাস চালিয়ে একটু আগেই ঢাকায় ফিরলাম। রাস্তায় কোনো সমস্যা নেই। আরামে আসা গেছে।

তবে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া হয়তো কেউ চলাচল করছেন না।ট্রেন চলাচলের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে শুরুতে কারফিউ শিথিলের সময় অল্প দূরত্বে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হলেও সেটি হচ্ছে না। তবে কারফিউ শিথিলের সময় স্বল্প দূরত্বের কিছু লঞ্চ চলাচল করেছে। অবশ্য লঞ্চ মালিকরা বেশি দূরত্বের লঞ্চ চালানোর দাবি জানিয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে অনুষ্ঠিত জামাতে অংশ নেয় রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো মুসল্লি।

নামাজ শুরুর আগে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। মসজিদের উত্তর গেটের সামনে থেকে পল্টন মোড় এবং দৈনিক বাংলার মোড় পর্যন্ত সড়কে ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি। এ ছাড়া গেটের ভেতরেও পুলিশ মোতায়েন ছিল।

পল্টন মোড়ে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও দেখা গেছে। মসজিদের দক্ষিণ গেটের বাইরে এবং আশপাশের প্রতিটি গলিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। পল্টন মোড়ে দেখা গেছে পুলিশের সাঁজোয়া যান। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে আজানের পর বিভিন্ন পকেট গেট দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লিরা।

জুমার খুতবা ও নামাজ শেষে মোনাজাতে অংশ নেয় মুসল্লিরা। মোনাজাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন সহিংসতায় নিহতদের রূহের মাগফেরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করা হয়। মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সতর্কতা হিসেবে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সব সময় প্রস্তুত।’

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ছাড়াও রাজধানীর অন্য মসজিদগুলোতেও জুমার নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে বিশেষ এই মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সহিংস ঘটনায় যারা মৃত্যবরণ করেছে, তাদের জন্য শোক জ্ঞাপন ও আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সারা দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত করার এ আহ্বান জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *