মারাত্মক বায়ুদূষণের ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : মারাত্মক বায়ুদূষণের ঝুঁকির মধ্যে এখন চট্টগ্রাম মহানগরী। সেইসঙ্গে বিপদের ঘণ্টা বাজার সংকেতও শোনা যাচ্ছে সমুদ্র তীরবর্তী পাহাড় ও নদীবেষ্টিত এই মহানগরীর প্রায় ৬০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের জটিল রোগ, চোখের প্রদাহসহ নানা রোগব্যাধি অতিদূষিত বাতাস থেকে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। 

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত প্রায় ২০ বছর ধরে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, ভবন-অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের নামে অবাধে সবুজ বৃক্ষরাজি ধ্বংস এবং রাতারাতি অসংখ্য খাল-পুকুর-জলাশয় ভরাট, একসময়ের প্রকৃতির সবুজকন্যা চট্টগ্রাম মহানগরীকে আজ দেশের ভয়াবহ বায়ুদূষণের শিকার নগরীগুলোর সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বাতাসে ধুলাবালির পাশাপাশি নানা জীবাণু ও ক্ষতিকর ভাসমান বস্তুকণার আধিক্য চট্টগ্রামের বাতাসে প্রায়শই দেখা যাচ্ছে বলে তারা জানান। এর জন্য তারা একশ্রেণির দুর্বৃত্তদের অবাধে দখলবাজি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) আধাখেঁচড়া উন্নয়ন কাজ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গত চার দশকের টানা ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের দৈনিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি ডিসেম্বর মাসেই বহুবার চট্টগ্রামের বায়ুদূষণের মাত্রা অস্বাস্থ্যকর ও অতি অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় উপনীত হয়েছে। এ বিষয়টি মনিটরিংয়ে নগরীতে পরিবেশ অধিদপ্তর স্থাপিত তিনটি কনটিনিউয়াস এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন কাজ করছে। এসব স্টেশন থেকে সরাসরি তথ্য-উপাত্ত প্রেরিত হচ্ছে ঢাকার আগারগাঁও বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে। সেখান থেকে প্রতিদিনই দেশের প্রায় সব অঞ্চলের বায়ুদূষণের দৈনিক সূচক তুলে ধরা হচ্ছে।

ঢাকাস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের পরিচালক মো. জিয়াউল হক ইত্তেফাককে বলেন, দেশের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার নগরী ও এলাকার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার। তার সামান্য নিচেই চট্টগ্রামের অবস্থান। যে কোনো সময় চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ বায়ুদূষিত নগরীগুলোর কাতারে চলে আসতে পারে। তিনি বলেন, দূষণের মাত্রা ২০০ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অতিক্রম করলেই বলা হয় অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ৩০০ অতিক্রম করলে বলা হয় হেজারডাস বা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৫০ অতিক্রম করলে বলা হয় অস্বাস্থ্যকর। তিনি বলেন, প্রচণ্ড বায়ুদূষিত নগরীগুলোতে আবার দিনের বিভিন্ন সময় দূষণের মাত্রা ওঠানামা করে। এক্ষেত্রে দিনের সর্বোচ্চ সূচকটিকেই দূষণের দৈনিক একিউআই হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে চট্টগ্রামসহ দেশের উল্লেখিত অঞ্চলগুলোর দূষণের মাত্রা ক্রমশ দ্রুত কমিয়ে আনা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা যে অভিমত দিয়েছেন, তা সঠিক বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে একিউআই বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বাতাসে দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ২০০, যাকে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অস্বাস্থ্যকর বলে অভিহিত করে থাকেন। ৮ ডিসেম্বর ছিল ২৩৯ মাত্রা এবং ৬ ডিসেম্বর ছিল ২৫১ মাত্রা, যাকে বিজ্ঞানীরা অতি অস্বাস্থ্যকর বাতাস বলে থাকেন। ৩ ডিসেম্বর ছিল ১৭৭ মাত্রা এবং ২ ডিসেম্বর ছিল ১৭৯ মাত্রা, যাকে বিজ্ঞানীরা অস্বাস্থ্যকর অভিহিত করে থাকেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক নাসিম ফারহানা শিরীন ইত্তেফাককে বলেন, নগরীতে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের পেছনে, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় বিএসআরএম ভবনের ছাদে, আগ্রাবাদে সিডিএ আবাসিক এলাকায় এবং পতেঙ্গা বন্দরের সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় মোট চারটি কনটিনিউয়াস এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন কাজ করছে। এসব স্টেশন থেকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে বাতাসের গুণমান পরীক্ষণের জন্য প্রতি মুহূর্তে তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *