চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের বদলির আদেশ বাতিল এবং উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, সার ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগে উপপরিচালক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখাসহ দিনভর নানা ঘটনা ঘটেছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম আট বছর ধরে সদর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ৫ ডিসেম্বর তাঁকে চুয়াডাঙ্গা থেকে মাগুরায় বদলি করা হয়। আদেশটি তিনি ৯ ডিসেম্বর হাতে পান। তার ওই বদলির আদেশ ঠেকাতে কয়েক শ কৃষক সংগঠিত হয়ে আজ আন্দোলনে নামেন।
অভিযোগ রয়েছে, যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আজগর আলী, যিনি এই বদলির কাগজে স্বাক্ষর করেছেন, তার চাকরির শেষ দিনে অর্থের বিনিময়ে একাধিক বিতর্কিত বদলি আদেশ জারি করেন। মাসুদুর রহমানের মতো জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ ধরনের বদলির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৃষকদের অভিযোগ গাড়াবাড়িয়ার কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে ২/৩ জন বিসিআইসি সারের ডিলার আছে। তাদের কাছে গেলে সার পাই না। অথচ দোকানে গেলে বেশি দামে সার পাচ্ছি। এক হাজার টাকার সার এক হাজার ছয়শত টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
কৃষকরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালককে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘উনি গত তিন মাস এখানে এসেছেন, তিন মাসেই সারের সংকট চলছে। উনার মতো অফিসার আমাদের প্রয়োজন নাই। আমাদের ঘাসকাটা অফিসারই ভালো। যাকে বদলি করা হয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা নাহলে সবাই চলে যাক। আমাদের কারো দরকার নাই।
কৃষাণী মৌসুমি বলেন, আমরা চাষাবাদ করি ঠিকই কিন্তু সময়মত সার পাই না। পাবলিক দোকানে গেলে বেশি দামে সার পাই। অথচ ডিলারদের কাছে সার পাই না। তিনি আরও বলেন, চাষের ক্ষেত্রে আমাদের মো. আমিরুল হক একজন ভালো অফিসার ছিলো। তাকে বদলি করেছে এই উপপরিচালক। আমরা ভালো কৃষি অফিসারকে চুয়াডাঙ্গাতে চাই।
উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সারের ডিলারদের কাছ থেকে অনৈতিক চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। কৃষকেরা অভিযোগ করেন, সার বিতরণ প্রক্রিয়ায় তার সরাসরি জড়িত থাকার ফলে ন্যায্যমূল্যে সার পেতে সমস্যার সম্মুখীন হন তারা। এক পর্যায় কৃষকরা উপ পরিচালক মাসুদুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
জেলার কৃষকেরা আরও অভিযোগ করেন, উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সমস্যার সমাধান না করে কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত দুর্ব্যবহার করেন। কোনো সমস্যা নিয়ে তার কাছে গেলে তিনি অধিকাংশ সময় উপজেলায় চলে যেতে বলেন এবং অনেক সময় কৃষকদের প্রতি অসৌজন্যমূলক ভাষায় কথা বলেন। ফলে জেলার কৃষকেরা তার আচরণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
কৃষকেরা উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমানকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানায়। তাদের মতে, এমন একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা জেলার কৃষি উন্নয়নের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসময় কৃষকরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জেলার কৃষকদের দাবি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হোক এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সদ্য বদলি হওয়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল হক বলেন, আমার উপপরিচালক মহোদয় আমাকে বদলী করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন এক পর্যায় তিনি আমার কাছে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। আমি সামান্য বেতনে চাকরি করি। এক লক্ষ টাকা না দিতে পারায় আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বদলি করেছেন। আর কৃষকদের দাবির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি বাড়িতে আছি। আমি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে থাকি।
বিসিআইসি জেলা সার ডিলার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আকবার আলী বলেন, কিছু সারের সংকট আছে। তবে উপপরিচালকের সাথে আমাদের কোন ডিলার অনৈতিক ভাবে অর্থ লেনদেন করেন না।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে অতিরিক্ত পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা বলার কোন সুযোগ না। সারের কোন সংকট নাই। আর বদলিটা আমি করি না। এটা আমাদের অতিরিক্ত পরিচালক করে থাকেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বদলীর বিষটি দাপ্তরিক বিষয়। আর সারের কোন ঘাটতি নাই। যদি কোন ডিলার বা ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।