ডিমের বাজার অস্থির

বানিজ্য

বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি n শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ n প্রতিদিন ৪ কোটি ডিমে ৮ কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে: বিপিএ

রীতিমতো অস্থির হয়ে উঠেছে ডিমের বাজার। সরকার দর বেঁধে দিয়েও ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। অর্থাৎ, এক হালি ডিমের দাম পড়ছে ৬০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে আরও বেশি দামে তা বিক্রি হচ্ছে। 

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ডিমের চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া, এখন বাজারে সব ধরনের শাকসবজির দাম চড়া। ফলে চাপ পড়েছে ডিমের ওপর। তবে প্রান্তিক খামারিরা অভিযোগ করেছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়াচ্ছে। করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্যের কারণে ডিমের বাজারে এই অস্থিরতা। এ পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাড়ে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া বাজারে ডিমের দাম কমাতে ডিম আমদানির ওপরে থাকা শুল্ককর সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। ডিম আমদানিতে বর্তমানে ৩৩ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়।

এনবিআরের কাছে পাঠানো চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, বাজারে ডিমের সরবরাহে ঘাটতির কারণে এর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সীমিত সময়ের জন্য সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকার মিম এন্টারপ্রাইজ, হিমালয় ও যশোরের তাওসিন ট্রেডার্স এক কোটি করে ডিম আমদানি করতে পারবে। এছাড়া ঢাকার প্রাইম কেয়ার বাংলাদেশ ও জামান ট্রেডার্স ৫০ লাখ, রংপুরের আলিফ ট্রেডার্স ৩০ লাখ এবং সাতক্ষীরার সুমন ট্রেডার্স ২০ লাখ ডিম আমদানির অনুমতি পেয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসেও এক দফায় ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এবার ডিম আমদানি করার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুমুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে। এদিকে এর আগে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার দর বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গত মাসে খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য প্রতি পিচ ডিম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ বর্তমানে খুচরা বাজারে একটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকার বেশি, যা নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদনেও ডিমের বাড়তি দরের তথ্য তুলে ধরেছে।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। যদিও বাস্তবে দাম বেড়েছে আরও বেশি। ডিমের এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের বাড়তি ফায়দা লোটার অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

ডিমসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অভিযান

রাজধানীসহ সারা দেশে ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও ভোজ্য তেলসহ নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গতকাল অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রাজধানীতে অধিদপ্তরের ছয় জন কর্মকর্তার নেতৃত্বে ছয়টি টিম অভিযান পরিচালনা করেন। ঢাকা মহানগরের পল্লবী থানাধীন মিরপুর-৬ ও মিরপুর-১১ বাজারে ডিম ও মুরগির দোকানে অভিযান চালিয়ে ডিম কেনার পাকা রসিদ না থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।

উল্লেখ্য, গতকাল দেশের ৪৮টি জেলায় অধিদপ্তরের ৫৩টি টিম অভিযানে ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *