সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীর তীররক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ৭০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। কক্সবাজারের চকরিয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তীব্রতায় মাতামুহুরী নদীর তীরে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ১২টি বসতবাড়ি। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ছোট ফেনী নদী দিয়ে পানি নামায় দুটি ঘর এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫টি ঘরের বাসিন্দারা।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ৭০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘটনাস্থলে জিও ব্যাগ ফেলে সংস্কারকাজ শুরু করেছে সিরাজগঞ্জ পাউবো। গত শনিবার সন্ধ্যার পর কাজিপুর উপজেলার মেঘাই পুরাতন বাঁধে এ ভাঙন দেখা দেয়। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুল হোসাইন গতকাল রবিবার বিকেলে বলেন, নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে বাঁধের তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এরই মধ্যে ৭০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে রবিবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে থেকে মেরামতকাজ তদারকি করছেন।
চকরিয়া (কক্সবাজার) : টানা তিন দিনের বর্ষণ ও পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে এখনো কক্সবাজারের চকরিয়ার অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
তন্মধ্যে পৌরসভার কোচপাড়ার কয়েক শ পরিবারের বসতবাড়িগুলো একেবারে ডুবে রয়েছে পানিতে। উজানের পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তীব্রতায় মাতামুহুরী নদীর তীরে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ১২টি বসতবাড়ি। বর্তমানে এসব পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নদীতে বিপত্সীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে পাহাড়ি ঢলের পানি।
এই পরিস্থিতিতে থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চকরিয়া পৌর এলাকা ছাড়াও উপজেলার বমুবিলছড়ি, কাকারা, লক্ষ্যারচর, সুরাজপুর-মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালী, হারবাং, বরইতলী ও বিএমচর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িসহ গ্রামীণ অবকাঠামো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এসব ইউনিয়নের নিচু এলাকার রোপিত আমন ক্ষেত ও রকমারি সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৌরসভার কোচপাড়ার বাসিন্দা আবদুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যখনই মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটির দিকে নেমে আসে, তখনই আতঙ্কে থাকে নদীতীরের বাসিন্দারা।’ চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম জানান, মাতামুহুরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়তে পারে—সেই আশঙ্কায় তীরে বসবাসরত ৪০টি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ১২ বসতবাড়ি। এসব পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ফেনী : দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের আশ্রাফপুরের বাসিন্দা বিবি জোহরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের ঘর হারানোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভাঙন যখন বেশি হয়ে যায় আমি আমার পুরো ঘর উঠিয়ে অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখি। এখন এই বৃষ্টির মধ্যে আমি কোথায় যাব, কোথায় থাকব।’ সাম্প্রতিক বন্যায় ছোট ফেনী নদী দিয়ে পানি নামায় দুটি ঘর এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। আরো প্রায় ১৫টি ঘরের বাসিন্দারা ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। সাবেক ইউপি সদস্য হারিছ আহাম্মদ পেয়ার বলেন, যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ প্রশাসন গ্রহণ না করে তাহলে আরো বড় বিপদে পড়তে হবে। দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’