স্বাভাবিক হয়নি শিশু একাডেমির কার্যক্রম

বাংলাদেশ
ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর প্রায় এক মাস পরও প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ভবনের পুড়িয়ে দেওয়া আসবাব, মালামাল সরিয়ে কোনোভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুদের সংস্কৃতির নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ, গ্রন্থ প্রকাশ, পুরস্কার প্রতিযোগিতা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, শিশুর বিকাশ কার্যক্রমসহ যেসব কাজ শিশু একাডেমি পরিচালনা করত, সেগুলো ফের এখনো শুরু করা যায়নি।

শিশু একাডেমিকে ফের কার্যকর করতে গত ২৯ আগস্ট মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

কমিটিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারন করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর দোয়েল চত্বর ঘেঁষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অবস্থান। দূর থেকে দেখলে প্রতিষ্ঠানটির লাল দেয়ালের নান্দনিক ভবনে ধ্বংসের চিহ্ন চোখে পড়ে না। তবে গতকাল রবিবার প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের বহিরাঙ্গন আগের মতোই আছে।

কিন্তু ভেতরের ক্ষত এখনো জ্বলজ্বল করছে। প্রতিষ্ঠানটির ভবনগুলোর ভেতরের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত প্রায় সবই পুড়ে ছাই। প্রশাসনিক ভবন, মুদ্রণ শাখা, জাদুঘর, প্রশিক্ষণ কক্ষ—সব তছনছ হয়ে আছে। মহাপরিচালকের কক্ষে জমে আছে ধ্বংসস্তূপ।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সহায়তায় এসব জঞ্জাল সাফ করতে দেখা গেছে গতকাল। পরিষ্কার করা কিছু কক্ষে বসানো হচ্ছে চেয়ার-টেবিল। অক্ষত আছে প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র বিক্রয় ও বিপণনের ‘দাদাভাই’ হল ভবনটি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে গত ৫ আগস্ট দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন শিশু একাডেমির প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করা একজন নিরাপত্তাকর্মী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কালের কণ্ঠকে জানান, ছয়জন নিরাপত্তাকর্মী সেদিন দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে হঠাৎ করে শিক্ষা ভবনের দিক থেকে শাহবাগমুখী জনতার একটা ঢল আসে। একাডেমির ফটকে একসঙ্গে অসংখ্য মানুষ ধাক্কা দিলে তা খুলে যায়। নিরাপত্তাকর্মীদের তখন নিজের জীবন বাঁচানো ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। এরপর উন্মত্ত জনতা দ্রুত ঢুকে প্রশাসনিক ভবন, মুদ্রণ শাখা, জাদুঘর, প্রশিক্ষণ কক্ষে  লুটপাট চালিয়ে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভেঙে ফেলা হয় নান্দনিক ভাস্কর্য ‘দুরন্ত’। এ সময় একাডেমি চত্বরে থাকা আটটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

প্রশাসন বিভাগের প্রগ্রাম অফিসার নুরুজ্জামান জানান, এর মধ্যে চারটি গাড়ি শিশু একাডেমির। অন্য চারটি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের।

গতকাল বিকেলে শিশু একাডেমিতে প্রবেশ করে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের অনেকেরই নিজের দপ্তরে বসার অবস্থা নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেক কক্ষের জানালার সব কাচ ভাঙা। এর মাঝেই কোনো কোনো কক্ষ পরিষ্কার করে বসার উপযোগী করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের অনেকে জানিয়েছেন, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে অনেক পানি ছিটায়। ফলে আগুনে পোড়ার পর বেঁচে যাওয়া নথিপত্র আরেক দফা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।

ধ্বংসের মাত্রা এত বেশি ছিল যে পরদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে এলেও বসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। নিরাপত্তার জন্য বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ রাখা হয় এক সপ্তাহ। ১৩ আগস্ট মহাপরিচালক আনজীর লিটন পদত্যাগ করেন। ২১ আগস্ট অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ভূঞাকে মহাপরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২৯ আগস্ট সেই আদেশ বাতিল করে অতিরিক্ত সচিব তানিয়া খানকে নতুন করে মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শিশু একাডেমির সহকারী পরিচালক দেলোয়ারা খাতুন জানান, প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় থাকা পাঠাগারের সব জানালা ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাঠাগার থেকে সব কম্পিউটার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যেও খুব দ্রুত স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *