বিধ্বস্ত উত্তরা পূর্ব থানা : টেবিল পেতে কাজ করছেন ওসি

বাংলাদেশ

মাথার প্রায় পুরোটা ব্যান্ডেজ। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই উত্তরা আজমপুর রেলস্টেশন এলাকায় মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছররা গুলি এসে লাগে মাদরাসার শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলামের (১৭)। আলামত হিসেবে কাগজের মোড়কে করে নিয়ে এসেছে শরীর থেকে বের করা চারটি ছররা গুলি। জানাল, এখনো তার মাথায় কয়েকটি গুলি রয়ে গেছে।

ওই সময় থানায় অভিযোগ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এখন এসেছে গুলির ঘটনায় মামলা করতে। সঙ্গে মা-বাবা এবং একজন স্বজন। পুলিশ কমর্কর্তার জন্য অপেক্ষা করছেন।

গতকাল শনিবার দুপুর সৌয়া ২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পূর্ব থানার একটি কক্ষে ফখরুলের সঙ্গে কথা হয়।

ওই কক্ষে একটি কম্পিউটার এবং কয়েকটি চেয়ার পেতে কোনো রকমে কাজ চালানো হচ্ছে। আন্দোলনের সময় ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত থানাটি এখনো বেহাল। এ সময় কোনো পুলিশ সদস্যও কক্ষে ছিলেন না।

ফখরুলের বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, যারা ফখরুলের মতো অনেককে গুলি করেছে, সেই ঘাতকদের বিচার চান তাঁরা। আর কেউ যেন ছাত্রদের ওপর এভাবে নির্বিচারে গুলি ছুড়ে জখম-হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে না পারে।

কাদের আসামি করা হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা ঘটনায় জড়িত কিংবা মদদদাতা, তাদেরকেই আসামি করা হবে।  তাদের সঙ্গে আলাপকালে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য ওই কক্ষে আসেন এবং তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

শুধু ফখরুল নন, তার মতো আরো অনেকে এখন থানায় অভিযোগ বা মামলা দিতে আসছেন, যারা গত আন্দোলনের সময় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

থানার আরেকটি কক্ষে এক কোণে কোনোমতে একটি টেবিল পেতে বসেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান। থানায় আসা লোকজনের সঙ্গে সেবা দেওয়ার বিষয়ে কথা বলছেন।

থানার কাজের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সপ্তাহখানেক হলো জয়েন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা সরিয়ে নতুন করে থানা অবকাঠামোগুলো ঠিক করা প্রায় শেষ। এখনো নির্দিষ্ট রুমে বসতে পারিনি। তবু এখানে বসে সেবা দিচ্ছি। যাঁরা আসছেন, সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, কাল (রবিবার) থেকে পুলিশের নির্দিষ্ট পোশাক এবং অস্ত্রে আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন পুলিশ সদস্যরা।

স্থাপনা মেরামতে কাজ চলছে: থানার সামনে দেখা যায় আন্দোলনের সময় ভাঙচুর ও আগুনে পোড়ানো কয়েকটি গাড়ি এখনো পড়ে আছে। থানার নামফলক এখনো সংস্কার করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে দেখা গেছে। ভেতরে বিভিন্ন রুমে মেরামতে কাজ চলছে। কোন কক্ষে কোন কর্মকর্তা রয়েছেন, এখনো নামফলক না দেওয়ায় প্রথমে একটু হকচকিয়ে যেতে হয়। কোথায় কার কাছে যাবে?

মামলার আলামত নষ্ট: থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিভিন্ন মামলার প্রায় সব আলামত নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধরা এই থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে গাড়িসহ থানার বিভিন্ন আসবাব ও অনুষঙ্গিক জিনিস পুড়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *