ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি লক্ষ্মীপুরের দুর্গম এলাকায়

বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুর জেলার ৯০ ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। গতকাল মঙ্গলবার ৭ লাখ ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী ছিলেন। এক দিনের ব্যবধানে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন প্রায় ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। দুর্গম এলাকার বেশির ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। তাঁদের অভিযোগ, সাত-আট দিন ধরে তাঁরা পানিবন্দী থাকলেও অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছায়নি ত্রাণসামগ্রী।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া লক্ষ্মীপুরে বর্তমানে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার প্রায় সাত লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি জেড এম ফারুকী ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি কামাল হোসেনের মতে, সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা ত্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু কেউ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। সবাই উঁচু সড়ক ধরে ত্রাণ পৌঁছে দেন। যে যাঁর মতো করে ত্রাণ দিচ্ছেন। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানভাসি মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছায়নি। এ জন্য ত্রাণ বিতরণে প্রশাসনের সমন্বয় প্রয়োজন।

নোয়াখালী জেলার বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। রহমতখালী খাল, ভুলুয়া খাল ও ওয়াপদা খাল হয়ে ব্যাপকভাবে পানি ঢুকতে থাকায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান। তিনি আরও বলেন, নোয়াখালী জেলার বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। নোয়াখালীর পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম বলেন, সবাই প্রধান সড়কের আশপাশে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। পানির জন্য কেউ ভেতরের দিকে আর ঢোকে না। অথচ প্রধান সড়ক থেকে বহুদূর পর্যন্ত ভেতরের দিকে বসতি রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলার ৯০ ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। এতে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। ডুবে গেছে, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি খেত ও বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও চার-পাঁচ ফুট পানি রয়েছে। জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই পানি ঢুকে পড়েছে।

বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এলাকাগুলোতে পানিবন্দীদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন।

রামগঞ্জ উপজেলা ভোলাকোট ইউনিয়ন সাইফুল ইসলাম জানান, দিনরাত থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে, বন্যার পরিস্থিতি ততই অবনতি হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এমন দুর্বিষহ অবস্থা ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও হয়নি। বন্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। অব্যাহত ভারী বৃষ্টি ও নোয়াখালী থেকে আসা পানিতে এখন উঁচু সড়কগুলো ছুঁয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া জানান, বন্যা পরিস্থিতির জন্য কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ত্রাণ বিতরণ করলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছানো যাবে। এ জন্য তিনি ত্রাণ বিতরণ করতে আসা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *