পানির নিচে ফেনী সদর হাসপাতালের নিচতলা

বাংলাদেশ

গত বুধবার বেলা একটার দিকে মাকে সঙ্গে নিয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে যান অন্তঃসত্ত্বা ফারজানা আক্তার। তাঁরা ঘর থেকে বের হওয়ার পর আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। সড়কে পানিও বাড়তে থাকে। পরে কাকভেজা হয়ে হাসপাতালে পৌঁছান দুজন।

সেদিন রাত দুইটার দিকে পুত্রসন্তানের মা হন ফারজানা। রাতের মধ্যেই হাসপাতালের নিচতলা পুরোপুরি ডুবে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ–সংযোগ। তাঁরা আর বের হতে পারেননি।

গতকাল রোববার ফেনীর মহিপাল থেকে দুই ঘণ্টা হেঁটে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় ফারজানার সঙ্গে। দ্বিতীয় তলার শিশু বিভাগের সামনের মেঝেতে শুয়েছিলেন তিনি। পাশে ছেলে ও মা শাহানা বেগম।

ফারজানার চোখেমুখে ছিল ক্লান্তির ছাপ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রথম সন্তানের মা হয়েছেন। আলাপের শক্তিও নেই। চার দিন ধরে ভাত পেটে পড়েনি তাঁর। পাশে বসা মা শাহানা বেগম এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, কোথায় গেলে ভাত পাওয়া যাবে?

শাহানা বলেন, বন্যায় রাস্তাঘাট ও হাসপাতাল ডুবে যাওয়ার পর আর বের হওয়ার সুযোগ পাননি। বৃহস্পতিবার কিছুই খেতে পারেননি তাঁরা। পরদিন শুক্রবার একজন ব্যক্তি মুড়ি ও চিড়া দিয়ে যান। সেসব খেয়েই আছেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘ডেলিভারির পর মাইয়াটা এক বেলা ভাত খেতে পারল না। খাবার না পেয়ে শরীর খারাপ করছে। বাচ্চা সিজার করে বের করছে। এখন খাবার দরকার।’

কথা বলে জানা গেল, ফারজানা তাঁর মা–বাবার সঙ্গে থাকেন। তাঁদের বাড়ি মহিপালে। যৌতুকের কারণে মাস ছয়েক আগে স্বামীর ঘর থেকে এক কাপড়ে বের হতে হয়েছে তাঁকে।

শাহানা বেগম বললেন, বন্যার কারণে তাঁদের কুঁড়েঘর ভেঙে গেছে। ঘর থেকে কিছুই বের করা যায়নি। তাঁরা পথে বসেছেন। এখন মেয়ে ও নাতিকে সামলাতে হচ্ছে, আবার ঘরবাড়ি নিয়েও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না।

হাসপাতালের অবস্থা বেহাল

হাসপাতালের নিচতলা পুরোপুরি ডুবে গেছে। স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট, জরুরি বিভাগ, স্টোর রুম, ব্লাড ব্যাংক—সবকিছু পানির নিচে। পানিতে ভাসছে হাসপাতালের নানা জিনিসপত্র।

সরেজমিনে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের চেয়ার–টেবিল পুরোপুরি ডুবে গেছে। কিছু ব্যাগ পানিতে পড়ে আছে। ওষুধের প্যাকেটও ভাসতে দেখা যায়।

হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ড, গাইনিসহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। সেখানে দিনের বেলায়ও ঘুটঘুটে অন্ধকার। কথা হয় রাজু আহম্মেদের সঙ্গে। একবুক পানি ঠেলে তিনি গতকাল হাসপাতালে পৌঁছান। তাঁর দুই বছর বয়সী ছেলের দাঁত ভেঙে গেছে। রাজু জানান, ছেলেকে মাথার ওপর নিয়ে ছয় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় তাঁকে। এসে কোনো চিকিৎসক পাননি।

কথা হয় হাসপাতালের কয়েকজন নার্সের সঙ্গে। জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ইতি বুশরা ও নুসরাত জাহান  বলেন, শনিবার থেকে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। পানির কারণে হাসপাতালে এত দিন আসতে পারেননি। অন্তত এক শ রোগী রয়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে সেবা দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *