রাজধানীতে গতকাল ছয় ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলি ও বিভিন্ন মার্কেট। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। বিভিন্ন স্থানে দোকান ও মার্কেটে ঢুকেছে পানি। মালামাল নষ্টসহ বড় ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা। সড়কে হাঁটুপানি হওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এতে বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হওয়া নগরবাসী ও শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। বিশেষ করে ছুটির দিন হওয়ায় সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা দিতে বের হওয়া চাকরিপ্রত্যাশীরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা এবারের বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ। গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এরপর বৃষ্টি আরও ভারী হয়ে পরবর্তী ৩ ঘণ্টায় অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুর ১২টার পরও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল, তবে তা সামান্য
ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, শাঁখারী বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার, নয়াবাজার, বাবুবাজার, বংশাল, মালিটোলা, নাজিরাবাজার, ঢাকা মেডিকেল ও গুলিস্তানে পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া মতিঝিল, টিকাটুলী, খিলগাঁও, রামপুরা হাজীপাড়া, মৌচাক, শান্তিনগর, বাড্ডা, গ্রিনরোড, পান্থপথ, ধানমন্ডি ২৭, জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১, ২, ১০, ১১, ১২, শেওড়াপাড়া, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত এলাকার প্রধান সড়ক, অলিগলি, দোকানপাট ও বাসাবাড়িতেও ঢুকেছে পানি। বিশেষ করে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, শাঁখারী বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার, নয়াবাজার, বাবুবাজার, বংশাল, মালিটোলা, নাজিরাবাজার ও গুলিস্তানসহ আশপাশের সব সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে এসব রুটে চলাচলকারী যানবাহনসহ জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষেরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের কষ্ট যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
একই সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে পুরান ঢাকার প্রায় দোকানপাট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। অনেক দোকান মালিক পানি সরানোর চেষ্টা করলেও কোনোভাবে ড্রেন দিয়ে নামছে না পানি। মুদি দোকান, ওষুধের দোকান ও খাবার হোটেলসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান খুলতে পারছেন না বিক্রেতারা। তবে কিছু ওষুধ ও খাবার হোটেল খোলা থাকলেও সড়কে পানি থাকায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এদিকে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ঢাকার কল্যাণপুরের প্রধান সড়ক। কল্যাণপুর নতুন বাজার মোড় থেকে কল্যাণপুর গার্লস স্কুল পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক পুরো পানির নিচে ডুবে গেছে। পথচারী ও কর্মস্থলে বের হওয়া মানুষকে হাঁটুপানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। ধানমন্ডি ২৭, গ্রিনরোড, মিরপুর ও মগবাজার এলাকার প্রধান সড়কসহ প্রায় সব অলিগলিতে হাঁটু-সমান, কোথাও কোথাও কোমর-সমান পানি জমেছিল। এতে একদিকে যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা, অন্যদিকে প্রাইভেট কার ও সিএনজির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে রাস্তার মধ্যে আটকে থাকতে দেখা গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে গাড়ির ধীরগতিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে নিউমার্কেট এলাকা। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে শুরু করে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কে জমেছে হাঁটু-সমান পানি। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাস্তার পার্শ্ববর্তী অপেক্ষাকৃত নিচু ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির সময় উপচে সড়কের পানি প্রবেশ করেছে মার্কেটের ভিতর। ফলে দোকানে রাখা শাড়ি, কাপড়, বই, জুয়েলারিসহ অন্যান্য সবকিছুই ভিজে গেছে। এমন অবস্থায় সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
পানির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করেই সকাল পার করতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। এই সুযোগে কোথাও কোথাও রিকশা ও ভ্যান চালু হয়েছে সড়ক পারাপার করতে। মানুষও বাধ্য হয়ে এসব বাহনে বেশি ভাড়া দিয়ে পারাপার হয়েছেন। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা দিতে বের হওয়া চাকরিপ্রত্যাশীরা। অতিভারী বৃষ্টির কারণে পানি জমে খালে পরিণত হওয়া সড়কগুলো দিয়ে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলারও অবস্থা ছিল না। এতে অনেকে নানা ভোগান্তি নিয়ে যেমন পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছান, অনেকে আবার নিয়োগ পরীক্ষা অংশগ্রহণের জন্য যেতেই পারেননি। মিরপুর ২-এর বাসিন্দা তৌহিদা সুমি সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েও মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি জলাবদ্ধতার কারণে। তিনি বলেন, বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম কিন্তু বাসার সামনেই পানি থইথই করছিল। কোনো রিকশাও পাওয়া যাচ্ছিল না। পানি মাড়িয়ে কিছু দূর যাওয়ার পরও কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। পরে দেরি হয়ে যায় দেখে বাসায় ফিরে আসছি।
নগরবাসী বলছেন, বৃষ্টি হলেই জলবদ্ধতা রাজধানীর নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তারা। জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য করপোরেশনের ৫ হাজারের অধিক কর্মী ও ১০টি অঞ্চলের জন্য আলাদা করে ১০ থেকে ১২ জনের টিম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মী পানি সরাতে কাজ করছেন। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, প্রকৌশলী ও বর্জ্য বিভাগের ১০০টি টিম মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। এ ছাড়া কমলাপুর ও ধোলাইপাড়ে চারটি বড় ও তিনটি ছোট পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।