বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও হুমকির অভিযোগ হিন্দু মহাজোটের

বাংলাদেশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের পর দেশের ৪৮ জেলায় ২৭৮টি জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও হুমকি এসেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মুখপাত্র ও নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে এ অভিযোগ করেন।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় সংগঠনের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলো হলো- দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক আক্রমণের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন করতে হবে। মন্দির ও বসতবাড়ি সরকারি খরচে পুনঃস্থাপন করতে হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা। আসন্ন দুর্গাপূজায় তিন দিনের ছুটি ঘোষণা এবং সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ভাঙচুর, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া, জমি দখল ও দেশত্যাগের হুমকির যে ঘটনা ঘটানো হলো তা ’৭১-এর পুনরাবৃত্তি। এটা কোনো মানুষের ওপর নয়, হিন্দু ধর্মের ওপর আঘাত।

এর আগে সোমবার (১২ আগস্ট) পর্যন্ত ৪৮ জেলায় ২৭৮টি জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও হুমকি এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছে আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের সব কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন।

পলাশ কান্তি দে বলেন, বিগত সময়ে সরকারে থাকা রাজনৈতিক দলের কাছে আমরা ২৪ বছর ধরে আমাদের দাবি জানিয়েছি, কিন্তু তারা তা পূরণ করেনি। এখন আমরা আশা করছি, বর্তমান সরকার আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবে। একইসঙ্গে আমাদের ছাত্ররা দেশব্যাপী যে আন্দোলন করছে, আমরা তার সঙ্গে একমত।

হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব বলেন, হিন্দু মহাজোটের নাম ব্যবহার করে এক ব্যক্তি যিনি বহিষ্কৃত, তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার নিন্দা জানাই। হিন্দু মহাজোট রাজনীতি নিরপেক্ষ হিন্দু অধিকার আদায়ের সংগঠন। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে খুশি করা বা কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হিন্দু মহাজোটের কাজ নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষা করা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হিন্দু মহাজোটের মূল আদর্শ।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায় বলেন, দেশে সরকার পরিবর্তন হলেই সর্বপ্রথম হিন্দুদের ওপর হামলা হয়। অতীতে তেমন আক্রমণ না থাকলেও ইদানীং বেশি হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে এ দেশে বেঁচে থাকতে চাই। এ দেশে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি। এ দেশে আমাদেরও অধিকার রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি সুধাংশু চন্দ্র বিশ্বাস, প্রধান সমন্বয়কারী ড. সোনালী দাস, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রনজিতকুমার মৃধা, প্রভাস চন্দ্র মণ্ডল, তপন হাওলাদার, জগন্নাথ হাওলাদার, সুনীল মালাকার, সঞ্জয় কুমার রায় প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *