শেখ হাসিনাকে যদি বিদায় করতে পারি, গুটিকয়েক সন্ত্রাসী কোনো বিষয় না

বাংলাদেশ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থী ও খুলনার অন্যতম সমন্বয়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার বিদায়ের পর দেশের মধ্যে একটা সন্ত্রাসী বাহিনী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আমরা শেখ হাসিনাকে যদি বিদায় করতে পারি, তাহলে এ ধরনের গুটিকয়েক সন্ত্রাসী আমাদের কাছে কোনো বিষয় না।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনার সমন্বয়কারীদের সঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়মান আহাদের সঞ্চালনায় সভায় প্রায় ১৯ জন সংগঠক শিক্ষার্থী পুলিশ কমিশনারের সামনে তাদের বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। বিকেল ৪টায় সভা শুরু হয়ে চলে প্রায় ৭টা পর্যন্ত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ অন্যান্য নিহতের স্মরণে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়।

সভায় সমন্বয়ক জহুরুল ইসলাম তানভীর বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে, সেগুলো অতিদ্রুত সংশোধন করে মাঠে নামতে হবে। সারা দেশে যে সন্ত্রাসী আক্রমণ, হামলা চলছে তা প্রতিরোধে পুলিশকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা খুলনা সদর থানার ওসিসহ যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত সময়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে আপনারা (পুলিশ) মাঠে নামবেন এবং বাহিনীকে সংস্কার করবেন। এখানে কোনো ধরনের নয়ছয় আমরা বরদাশত করব না। আমরা আপনাদের পর্যবেক্ষণে রাখব।

জহুরুল ইসলাম তানভীর আরও বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিরাপত্তা দিতে হবে। দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা কোনো লিয়াজোঁভিত্তিক প্রশাসন চাই না। কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসলে পুলিশের ভূমিকা কী হবে তা স্পষ্ট করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে বলতে চাই, যদি সত্যিই আপনারা দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মানুষের ভালো চান, নিজেদের উন্নয়ন না করে জনগণের উন্নয়ন করতে চান তাহলে আপনারা রাস্তায় আসুন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করুণ, ময়লাগুলো পরিষ্কার করুন। আপনারা প্রমাণ করুন আপনারা দেশের জন্য দশের জন্য আন্দোলনে ছিলেন।

সমন্বয়ক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, আমরা দেখতে চাই ভবিষ্যতে পুলিশ কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে না। তারা জনগণের পুলিশ হয়ে কাজ করবে। খুলনা জেলা ও নগরে পুলিশের কোনো রকম দুর্নীতি অনিয়ম করতে পারবে না, খুলনাকে সন্ত্রাসীমুক্ত ও চাঁদাবাজমুক্ত ঘোষণা করতে হবে। কোনো পুলিশ যদি কোনো অপরাধীকে আশ্রয় দেয় তাহলে তিনি খুলনায় থাকতে পারবেন না।

আন্দোলনে আহত খুবি শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি প্রথম দিকে আন্দোলনের সঙ্গে তেমন যুক্ত ছিলাম না। যখন আমার কাছের বন্ধু মুগ্ধ আন্দোলনে মারা যায়। তখন আমি বাসা থেকে প্রতিজ্ঞা করে বের হই। দেশকে স্বাধীন না করেই আমি ঘরে ফিরব না। সেই থেকে আমি এখনো খুলনাতে আছি বাসায় যাওয়া হয়নি।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, কোটার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রবল অসহযোগিতা করায় কুয়েট ভিসি এবং তার অনুগতদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।

সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি মতামত জানিয়ে বলেন, যৌক্তিক সংগ্রামে বাধাদানকারী খুলনার অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের শিগগিরই প্রত্যাহার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশের সহায়তাকারী ছাত্রলীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, ওয়ার্ডভিত্তিক পুলিশিং কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি বিএল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করতে হবে। কলেজ প্রশাসনের সহায়তায় পুলিশ প্রশাসনকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ক্যাম্পাসে ভাঙচুর ও লুটপাটের পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অন্যতম সমন্বয়ক সামিয়া সানজানা বলেন, খুলনার পুলিশ কোনো নির্দিষ্ট দলের অধীনে কাজ করতে পারবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করতে হলে কলেজ প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য, পরিবহন ভাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যেন কোনোভাবেই বেশি না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের, মিনহাজুল ইসলাম, বিপুল শাহরিয়ার, সাইফ নেওয়াজ, শাহাবুল, সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের শেখ রাফসান, তারেক রহমান, ব্রজলাল কলেজের রুমি আক্তার, খুলনা মেডিকেল কলেজের মুস্তফা জায়েদ, সরকারি পাইওনিয়ার কলেজের সাবিকুন নাহার, রাইসা প্রমুখ।

সভার শেষ দিকে কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কেএমপির থানায় সাধারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতি মাসেই সমন্বয়কদের নিয়ে কেএমপিতে একটি সভা হবে। প্রথমে থানাভিত্তিক পুলিশিং কমিটিতে আপনাদের প্রতিনিধিদের রাখা হবে কয়েকদিনের মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়েও আপনাদের প্রতিনিধি থাকবে।

কেএমপি কমিশনার বলেন, খুলনার ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার যাতে ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং কোনো অজুহাত ছাড়া যাতে সেবা মেলে এখনি সে ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ আর দলভিত্তিক বা লেজুড়বৃত্তির আচরণ করবে না। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ব্রজলাল কলেজে প্রথমে অস্থায়ী ক্যাম্প পরে স্থায়ী ক্যাম্প করব।

কেএমপি কমিশনার আরও বলেন, যারা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করছে তারা যে দলেরই হোক না কেন আমরা আপনাদের সঙ্গে থেকে নির্মোহভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও খুলনার অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তারা যদি অন্যায়ও করে তবু তাদের গ্রেপ্তারের আগে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে কথা বলব। খুমেক হাসপাতালে যদি দালাল-ফড়িয়া থাকে তাহলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *