নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে ড. ইউনূসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, উনি অত্যন্ত আগ্রহী এই কাজ করার জন্য। তাকে সশস্ত্র বাহিনী সর্বতোভাবে সহায়তা করবে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সেনাসদরে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।
ড. ইউনূস আজ দুপুর ২টার দিকে দেশে আসবেন জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি উনাকে রিসিভ (অভ্যর্থনা জানাতে) করতে যাব। আমরা তাকে সর্বতোভাবে সহায়তা করব। সেনাপ্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান, সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী—সবার কাছ থেকে তিনি সহযোগিতা পাবেন। আমি নিশ্চিত যে অত্যন্ত সফলভাবে উনি এ কাজ সমাধান করতে সক্ষম হবেন।
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছে, তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, এসব অপরাধে যারা জড়িত, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না, অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে গত দুদিনে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, তিনি বিব্রত।
হামলা, লুটপাট, ডাকাতি প্রতিহতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। যেই মুহূর্তে এই ট্রানজিশনটা হবে, তখন এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। উনারাও বলেছিলেন, যতদূর সম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। তার পরও কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটা ঘটার পেছনে কিছু কারণও আছে। ইনিশিয়ালি কিছু ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি অনেক শান্ত হয়ে এসেছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, পুলিশ কিন্তু ডিউটিতে নেই। পুলিশ একটি বড় ফোর্স, এটার যে ভয়েড (শূন্যতা) সৃষ্টি হয়েছে, এই ভয়েডটা সেনাবাহিনীর স্ট্রেংথ (শক্তি) দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তার পরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। হাজার হাজার লোককে এ ধরনের সমস্যা থেকে উদ্ধার করেছি। বহু পুলিশ, থানা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেসকিউ করেছি। গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বিমানবন্দর, ডিপ্লোমেটিক এরিয়া, সেক্রেটারিয়েট, জাজেজ কোয়ার্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো প্রটেক্ট করছি। তার পরও ইনিশিয়ালি দু-এক দিন এটা হয়েছে। সেজন্য আমি দুঃখিত এবং বিব্রত।
পুলিশ পুনর্গঠনের পর এ ধরনের সহিংসতা প্রতিহত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তারপর কিছু ঘটনা হয়ে গেছে। আমাদের এনাফ স্ট্রেংথ ছিল না। কিন্তু আমি নিশ্চিত, যখন পুলিশ পুনর্গঠন হয়ে যাবে, তারা যখন কাজে নেমে যাবে, তখন আমরা এই ভয়েডটা খুব সহজেই পূরণ করতে পারব। পুলিশ একটি বিরাট ফোর্স, এই ফোর্স যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তাহলে এটার ভয়েড পূরণ করা সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী সবার পক্ষেও সম্ভব নয়। আমরা এটার জন্য ডিজাইনড নই। আমরা নিশ্চিত পুলিশ খুব দ্রুত রিফর্ম হবে, এসব ভেন্ডেলিজম (সহিংসতা) প্রতিহত করতে সক্ষম হবে। বাট আমি বলছি, যারা এসব কাজে জড়িয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
সেনাপ্রধান বলেন, পুলিশ পুনর্গঠনের কাজ চলছে। একজন পুলিশ প্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, পুলিশের মনোবল আবার ফেরত আসবে। পুলিশ প্রফেশনাল ফোর্স হিসেবে তাদের দায়িত্বত পালন করতে সক্ষম হবে।
পুলিশের অনুপস্থিতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক পরিষ্কারের কাজে নেমেছে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। তাদের কাজের প্রসংশা করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবকরা চমৎকার কাজ করছে। ট্রাফিক পুলিশ ছিল না, তারা ট্রাফিকের কাজ করছে। রাস্তা পরিষ্কার করা, যেসব স্থাপনার ভেন্ডেলেশন হয়েছে, সেগুলো পরিষ্কার করছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত, তারা এই ভালো কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অনুরোধ করব, এই ভালো কাজগুলো যেন তারা চালিয়ে যায়। ঢাকার বাইরে যেসব লুটতরাজ, অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সেগুলো প্রতিহত করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তারা সেই কাজও করছে। আমরা সবাই মিলে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফেরত আসতে পারব।
গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান। তিনি বলেন, অনেক ধরনের গুজব চলছে। জনগণকে আহ্বান করব, এ ধরনের গুজবে যেন কান না দেয়। আমরা একটা চমৎকার পরিবেশে, সুন্দরভাবে, সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি। সেনানিবাসের মধ্যে বিভিন্ন কিছু হচ্ছে বলে গুজব রটানো হচ্ছে। এসব গুজবে কান দেবেন না। গুজব ছড়াতেও সাহায্য করবেন না। নিশ্চিত না হয়ে অন্যজনকে এ ধরনের তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এ সময় তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমার কমান্ডার, জিওসিদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিস্থিতি এখন অনেক উন্নতি হচ্ছে। তিন-চার দিনের মধ্যে দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে। তবে যারা এসব অপরাধ করেছে, তাদের আমরা ছাড় দেব না। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে।