সম্প্রতি সিলেটের কানাইঘাটে শিশু মুনতাহা আক্তার (৫) ও রাজধানীর আজিমপুরে আট মাস বয়সী শিশু আরিসা জান্নাত জাইফার অপহরণের ঘটনা দেশব্যাপী উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। শিশু অপহরণের এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে। পুলিশ সদরদপ্তর বলছে,দেশে প্রতিদিন গড়ে অন্তত তিনটি করে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটছে। অপহৃত ২৯ ভাগ শিশুকে উদ্ধার করা যায়নি। অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ ১০ মাসে মারা গেছে ৪৮২ জন শিশু।
শিশু অপহরণের পেছনে পারিবারিক শত্রুতা, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, পাচার ও বিক্রি করা প্রধান উদ্দেশ্য বলে পরিসংখ্যানে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, সারাদেশে শিশু অপহরণের ঘটনায় গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে থানায় ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। অর্থ আদায়ের জন্য অপহরণ করে জিম্মি করার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০–এর আওতায় এসব মামলা করা হয়। সরাসরি থানায় ও আদালত থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় শিশু অপহরণ ও পণবন্দীর (জিম্মি) মামলায় ৯ মাসে উদ্ধার হয়েছে ৪৯১ শিশু। অর্থাৎ ২৯ শতাংশ শিশু উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার না হওয়া শিশুদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি।
আইন ও সালিস কেন্দ্র জানিয়েছে, ১০ মাসে নির্যাতন, সহিংসতা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যু হয়েছে মোট ৪৮২ শিশুর। গত বছর একই সময়ে মারা যায় ৪২১ শিশু।
গত ৩ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাটে নিখোঁজ হয় ৬ বছরের মুনতাহা। নিখোঁজের সাতদিন পর বাড়ির কাছের নালা থেকে উদ্ধার হয় তার মরদেহ। ১৫ নভেম্বর রাজধানীর আজিমপুরে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে মালামাল লুট ও ৮ মাসের শিশু জাইফাকে অপহরণ করা হয়। অবশ্য, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার করা হয় জাইফাকে।
শিশুদের প্রতি অপরাধ বন্ধ করতে সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ অপরাধ বিশ্লেষকদের।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সামগ্রিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে পরিস্থিতিকে অনুকূলে রাখার, মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করার যে পরিস্থিতি তা-ও করতে পারছে না। একটা ঘাটতি বা শূন্যতা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
শিশুরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না বলে তারা অপরাধীদের সহজ টার্গেট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারেও বাড়ছে শিশু নির্যাতন।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মেখলা সরকার বলেন, দিন দিন আমরা আরও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছি। আমরা আইসোলেশন হয়ে যাচ্ছি। মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে এবং ফলে অন্যের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা কমে যাচ্ছে। আমাদের সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটা নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। কাছের মানুষের সঙ্গে নানা পরিবর্তন দেখা যায়।