‘হাসিনা পালিয়েছে’ এটির ভিন্ন শব্দ প্রয়োগ গণমাধ্যমের বিবেকের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে

রাজনীতি

দেশের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণহত্যাকারী হাসিনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী হাসিনা পালিয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা আপনারা আপনাদের যার যার সংবাদপত্রে নির্ভয়ে এই শব্দটি লিখবেন ‘হাসিনা পালিয়েছে’। ‘হাসিনা পালিয়েছে’ শব্দটির পরিবর্তে কোনো গণমাধ্যম যদি ভিন্ন শব্দ প্রয়োগের অপকৌশল নেন সেটি জনগণের কাছে আপনাদের বিবেকের স্বাধীনতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আহ্বান গত ১৫ বছরে যারা গুম, খুন, অপহরণের শিকার হয়েছেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হাজারো মানুষ যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের এবং তাদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করুন। ‘সাগর-রুনি’র হত্যা মামলার তদন্ত এক যুগেও কেন শেষ হলো না সে প্রশ্ন তুলুন। জনগণ আপনাদের কাছ থেকে ‘আয়নাঘর’ নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট দেখতে চায়। হাসিনা দেশকে লুটেরা রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল- জনগণ দুর্নীতির সে সব চিত্র প্রতিদিন সংবাদপত্রে দেখতে চায়। গণহত্যাকারী হাসিনা প্রতিবার কীভাবে জনগণের ভোট ডাকাতি করেছিল গণমাধ্যমে প্রতিদিন সে সব চিত্র তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের আহ্বান জানাই। গণমাধ্যমে হাসিনার অপকর্ম ফ্রেমবন্দি থাকলে ভবিষ্যতে আর কেউ হাসিনার মতো ভোট ডাকাতি, গণহত্যায় লিপ্ত হতে সাহস করবে না, যা গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করবে এবং ক্ষমতাসীনদের স্বৈরাচারী আচরণ থেকে বিরত থাকতেও বাধ্য করবে, বলেন তারেক রহমান।

ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গত ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল। আন্দোলন করতে গিয়ে এ সময়ে অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, অপহৃত হয়েছেন। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যাকারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা হতাহত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সহায়তার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে গণঅভ্যুত্থানে যারা হতাহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় আয়োজনে সংবর্ধনা দেওয়া হলে, রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানালে কিছু সময়ের জন্য হলেও হতাহতদের পরিবারগুলো হয়তো একটু মানসিক শান্ত্বনা পাবেন। এ ধরনের উদ্যোগ গণঅভ্যুত্থানের চেতনা আরও শাণিত করবে বলেও আমার বিশ্বাস। তিনি প্রতি বছর ৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় জীবনের একটি বিশেষ দিবস হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করার বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার বলেও উল্লেখ করেন।

তারেক রহমান বলেন, ২০১৮ সালেও সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল। সে সময় আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রীয় প্রতারণার শিকার হয়েছিল। গণহত্যাকারী হাসিনা আন্দোলনকারীদের নির্মমভাবে দমন করেছিল। এমনকি জালিম হাসিনা সেই সময় আহতদের চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি। সুতরাং, দেরিতে হলেও ২০১৮ সালের হতাহত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বর্তমানে রাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। আমি বিশ্বাস করি তারুণ্যের শক্তি, তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে কখনোই একটি রাষ্ট্র ও সরকার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।

সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের পথ ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। সেই নির্বাচনে জনগণের রায় পেতে জনগণের মন জয় করুন। জনগণের বিশ্বাস এবং ভালোবাসা অর্জন করুন। সুখে-দুঃখে জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণকে সঙ্গে রাখুন। ধর্ম, বর্ণ, পরিচয়ের কারণে কেউ যাতে অনিরাপদ বোধ না করেন দায়িত্বশীল এবং জনপ্রিয় দল বিএনপির একজন নেতাকর্মী, সমর্থক হিসেবে সেটি নিশ্চিত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *