প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের সফরে আজ সোমবার চীনে যাচ্ছেন। তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। তবে অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোসহ প্রভৃতি বিষয়ে ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারকে সই হতে পারে। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিস্তারিত তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। তিনি সোমবার (আজ) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং চীনের স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনারসহ যথাযথ অভ্যর্থনা জানানো হবে।
আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সাংগ্রিলা সার্কেলে অনুষ্ঠেয় ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেবেন। বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল সম্মেলনে যোগ দেবে। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী চাইনিজ পিপল’স পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। বিকেলে ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআনমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। রাতে তিনি বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন। সাক্ষাতের আগে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এরপর দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০ থেকে ২২টির মতো সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হবে এবং কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা হবে। সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চীনের রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের সমঝোতা; অর্থনৈতিক উন্নয়ননীতি সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা; বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত সহযোগিতা; নবম চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নিয়ে সমঝোতা; মেডিক্যাল ও পাবলিক হেলথ বিষয়ে সমঝোতা; রেডিও ও টেলিভিশন-সংক্রান্ত সহযোগিতা সমঝোতা।
একই দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
তিস্তা প্রকল্প আলোচনায় তুলবে না ঢাকা :পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশের অনুরোধে তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন। তবে এই সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঐ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা উত্থাপন করা হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা যদি তারা আলোচনায় আনে, তাহলে আলোচনা হবে।
চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটি নিয়ে পরে আলাপ করব, আজ নয়।’ তিব্বত ও তাইওয়ান বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা যে কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতায় বিশ্বাস করি।’