আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে উপহারের নামে টাকা পাচার

খেলা

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের আঞ্চলিক স্পনসর হওয়ার প্রক্রিয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ অবৈধভাবে অর্থ প্রেরণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অধীনস্থ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের (এফআইসিএসডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

উক্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বিকাশের ব্রান্ড পার্টনারশিপ চুক্তি সংক্রান্ত অনিয়ম বিষয়ে এফআইসিএসডির একটি প্রতিনিধিদল কিছুদিন আগে ঢাকায় বিকাশের অফিস পরিদর্শন করে। তারপর এই প্রতিবেদন তৈরি করে তারা।

প্রতিবেদনে এফআইসিএসডি বলছে, বিকাশ লিমিটেড আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সঙ্গে তাদের ব্রান্ড পার্টনারশিপের চুক্তি করতে গিয়ে যে অনিয়ম করছে তা ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৪-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিকাশের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না-এ বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি বিএফআইইউকে আরও অধিকতর তদন্তের জন্য সুপারিশ করেছে এফআইসিএসডি।

এফআইসিএসডি হচ্ছে-মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা যা বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন। এরা মূলত বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টকৃত সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন, মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসের অর্থায়ন সম্পর্কিত তথ্য বিশেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট প্রদান করে।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ফুটবল পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ২০২২ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গত বছরের মে মাসে বিকাশ বাংলাদেশে দলটির আঞ্চলিক স্পনসরশিপের ঘোষণা দেয়। বিকাশের পক্ষ থেকে তখন স্পনসরশিপে অর্থের অংক প্রকাশ না করলেও পরবর্তীকালে জানা যায় এক্ষেত্রে ৪ লাখ ১০ হাজার ডলার লেনদেন হয়েছে। জানা যায়, বিকাশের প্রেরিত অর্থ বাংলাদেশ থেকে প্রেরণ করা হয়নি, এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদনও নেই।

৪ লাখ ১০ হাজার ডলার পরিশোধের জন্যে বিকাশের পক্ষ থেকে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদন করা হয়। তবে ডলার-সংকট এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আবেদন মার্চ মাসে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে তদন্ত করে জানতে পারে বিকাশ লিমিটেডের কোনো একটি বিদেশি বিনিয়োগারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের নামে উপহার হিসেবে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনকে এই পুরো ৪ লাখ ১০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, অনুমোদনের বাইরে এমন লেনদেন সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অবৈধ।

এফআইসিএসডির উপপরিচালক অরূপ কুমার দাস স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিকাশ লিমিটেডের সঙ্গে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কোনো চুক্তি হয়নি। বরং এককালীন পেমেন্টের মাধ্যমে বিকাশের বিদেশি অংশীদার প্রতিষ্ঠান উক্ত অর্থ পরিশোধ করেছে। পরে সেই প্রতিবেদন অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও অনুমোদন করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিকাশ এটিকে উপহার বললেও এটি আসলে পরবর্তীকালে কোনো না কোনো সময় বিকাশে বিদেশি অংশীদারের বিনিয়োগ হিসাবে দেখানো হবে। এর মাধ্যমে দেশের ডলার না এসেও দেশে ডলারের বিনিয়োগ দেখানো হবে। এটি আসলে মানি লন্ডারিং বা হুন্ডিরই একটা অংশ। অন্যদিকে চুক্তির বিষয়ে অস্পষ্টতার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পরিদর্শনকালে বিকাশ লিমিটেডের নিকট বিদেশি অংশীদার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য, পেমেন্টের ধরন, চুক্তির তথ্য ইত্যাদি চাওয়া হলেও বিকাশ লিমিটেড কোনো স্বচ্ছ জবাব দেয়নি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সঙ্গে বিকাশের চুক্তি এবং অর্থ পরিশোধ করা সংক্রান্ত পুরো বিষয়টির স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল বারবার বিভিন্ন তথ্য চাইলেও বিকাশের পক্ষ থেকে চুক্তি পত্র বা বিকাশের পক্ষ থেকে অর্থ প্রদানকারী কোনো কোম্পানি বা সংস্থার নাম সরবরাহ করা হয়নি। আর এটিকেই এফআইসিএসডি ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৭৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন। একই সঙ্গে বিষয়টি সন্দেহের উদ্রেক করে। তারই প্ররিপ্রেক্ষিতে বিকাশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না-তার কারণ দর্শাতে নির্দেশনা দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বিভাগটি।

এ বিষয়ে বিকাশ লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের কোটি কোটি আর্জেন্টিনা ভক্ত এবং এবং দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে উদ্দীপ্ত করতে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে রিজিওনাল ব্রান্ড পার্টনারশিপ করে বিকাশ। এরই ধারাবাহিকতায় আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ), বাংলাদেশ ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানা অর্জন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ দেশের তারুণ্যকে পরিচিত করাতে নানা পদক্ষেপ নেয়। সে লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুশাসন মেনেই আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে রিজিওনাল ব্রান্ড পার্টনারশিপ করে বিকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *